সিরিয়াল নামের অনুসন্ধানী পডকাস্টটির মূল চরিত্র আদনান সৈয়দ, যিনি হাইস্কুল শিক্ষার্থী হে মিন লিকে হত্যার অভিযোগে ২৩ বছর জেল খেটেছেন।
তিনি বরাবরই বলে আসছিলেন, এই অপরাধের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর শহরের প্রসিকিউটরদের তদন্তে দেখা যায়, তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করতে যে সাক্ষ্য-প্রমাণ ব্যবহার করা হয়েছে তাতে সমস্যা রয়েছে এবং তদন্তে “বিকল্প সন্দেহভাজন” থাকার সম্ভাবনাও সামনে এসেছে। তাই গত বছরের সেপ্টেম্বরে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।
তাঁর মুক্তি একটি সুস্পষ্ট অন্যায়ের অবসান ঘটিয়েছে এবং সাড়া জাগানো এই অডিও অনুষ্ঠানের পেছনে থাকা রিপোর্টিং দলটির সুখ্যাতি সুদৃঢ় করেছে।
“সত্যিকারের অপরাধভিত্তিক পডকাস্ট ও কন্টেন্টের বিপুল শ্রোতা আছে, যা অনুসন্ধানী স্টোরির যুৎসই ক্ষেত্র।” — সুজান রিবার, স্ক্রিপসের নির্বাহী পডকাস্ট প্রযোজক“আদনান সৈয়দ গতকাল কারাগার থেকে বেরিয়েছেন। পুরো ব্যাপারটা ছিল অসাধারণ,” বলেছেন সাংবাদিক সারাহ কোয়েনিগ। তাঁর কারামুক্তির পর, ২০১৪ সালে প্রচারিত মূল পডকাস্টের একটি ফলো-আপ পর্ব আয়োজন করেন সারাহ। “আমাদের স্টোরিটি প্রথম সম্প্রচারের পর কয়েক বছর ধরে… যে চিত্রটি উঠে এসেছে: আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যত রকমের দুরারোগ্য সমস্যা থাকতে পারে, তার প্রতিটিই আদনানের মামলায় ছিল। পুলিশের প্রশ্নবিদ্ধ সাক্ষাৎকার পদ্ধতি। প্রসিকিউটরের পক্ষ থেকে বিবাদীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ আড়াল করা। কিছুটা অপবিজ্ঞান। সর্বোচ্চ কারাদণ্ড। কিশোরদের প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বিবেচনা করা। একবার দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর আদালতে আপনার মামলা ফিরিয়ে আনা যে কী কঠিন।”
ধারাবাহিকটি সৈয়দের মামলার ব্যাপারে গোটা বিশ্বের মনোযোগ কেড়েছে এবং দেখিয়ে দিয়েছে যে, প্রশ্ন তোলার ক্ষেত্রে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কতটা শক্তিশালী ও ভালো কাজে পডকাস্ট কীভাবে অনুসন্ধানী কাঠামো ব্যবহার করতে পারে।
সিরিয়াল প্রকাশের প্রায় এক দশক পেরিয়ে গেছে। কিন্তু আজকের দিনে একটি ভাল পডকাস্ট বানাতে কী লাগে? স্ক্রিপসের প্রাক্তন ওয়াশিংটন ব্যুরো প্রধান ও এনপিআর-এর সংবাদ বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এলেন ওয়াইজ বলেন, সব দুর্দান্ত অনুসন্ধানই দুর্দান্ত পডকাস্ট হয় না; হলেও, সেরা কাজগুলোতে “জোরালো আবেদন থাকে, কিছু একটা উন্মোচিত হয়, কিছু একটা ঘটে, চরিত্রই সেগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যায়।”
স্ক্রিপসের নির্বাহী পডকাস্ট প্রযোজক এবং সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিংয়ের অনুসন্ধানী রেডিও অনুষ্ঠান ও পডকাস্ট রিভিলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সুজান রিবার বলেন, পডকাস্ট “অনুসন্ধানী স্টোরির উপযুক্ত বাহন।” তিনি বলেন, সেরা পডকাস্ট হলো সেই স্টোরি, যেখানে “পটভূমি, রহস্য ও বাঁক” থাকে।
গত বছর একটি ফোরামে তিনি বলেছেন, “সত্যিকারের অপরাধভিত্তিক পডকাস্ট ও কন্টেন্টের বিপুল শ্রোতা আছে, যা অনুসন্ধানী স্টোরির যুৎসই ক্ষেত্র। অনুসন্ধানী স্টোরিতে গভীরতা থাকে, সেই গভীরতার সন্ধানে গিয়ে আমরা এমন বিষয় সামনে আনছি, যা সাধারণ মানুষের অজানা।”
জিআইজেএনের বৈশ্বিক দল আমাদের গত বছরের কয়েকটি প্রিয় অনুসন্ধানী পডকাস্ট পর্যালোচনা করেছে। কিছু পডকাস্ট কেলেঙ্কারি ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখেছে। বাকিগুলো নেতৃস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের অতীত বা জাতীয় কেলেঙ্কারি নিয়ে অনুসন্ধান করেছে। এই তালিকায় ট্র্যাজেডি, জনস্বার্থ, রাজনীতি, অপরাধ ও দুর্নীতি নিয়ে মেক্সিকো, চীন, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র, তথা গোটা বিশ্বের স্টোরি উঠে এসেছে।
আফটার আয়োজিনাপা, রিভিল
- দেশ: মেক্সিকো/যুক্তরাষ্ট্র
- ভাষা: ইংরেজি/স্প্যানিশ
মেক্সিকোতে মাদকযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট সহিংসতা যত ট্র্যাজেডি জন্ম দিয়েছে তার তালিকা বেশ দীর্ঘ। তবে একটি ঘটনা গোটা আলোচনাকে বদলে দিয়েছে। আয়োজিনাপা: যে হত্যাকাণ্ড সাধারণ মানুষের মনে ঘটনার “আগের” ও “পরের” একটি বোধ তৈরি করেছে। ২০১৪ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর প্রশান্ত মহাসাগরীয় রাজ্য গুয়েরেরোর আয়োজিনাপা এলাকার একটি গ্রামীণ শিক্ষক-কলেজের ৪৩ জন শিক্ষার্থী হামলার শিকার হন। এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। সেদিনের ঘটনা ও হত্যাকাণ্ডের কুশীলবদের নিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলা তদন্তটি কর্তৃপক্ষ কীভাবে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে, সেটাই উন্মোচিত হয়েছে ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষার এই অনুসন্ধানী পডকাস্টে৷ এতে তুলে ধরা হয়, হামলার সঙ্গে স্থানীয় পুলিশের সম্পৃক্ততার বিষয়টি “এড়াতে” সরকারের বিভিন্ন প্রশাসন মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করেছে। কিন্তু ঘটনা সম্পর্কে সরকারের ব্যাখ্যার সঙ্গে স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের তদন্তের ফলাফলে অমিল পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীদের ওপর এই হামলার ঘটনা অনুসন্ধান করে রিভিল দেখিয়েছে, মেক্সিকোর এই ছোট শহরের ঘটনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে মাদকের ব্যবহার ও সংগঠিত অপরাধী চক্রের সম্পর্ক আছে এবং মেক্সিকোর কিছু প্রতিষ্ঠান ক্ষমতাসীনদের রক্ষা করছে। “ল্যাটিনেক্স ফাইলস” শিরোনামে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের ২০২২ সালের সেরা পডকাস্ট তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে – একজন প্রতিভাবান ও দোভাষী নারী অনুসন্ধানী সাংবাদিকের – সবাইকে নাড়া দেওয়া ও নিখুঁতভাবে প্রযোজিত এই পডকাস্ট। — আন্দ্রেয়া আরজাবা
হোক্সড, টরটয়েজ মিডিয়া
- দেশ: যুক্তরাজ্য
- ভাষা: ইংরেজি
এই পডকাস্টের শুরু ২০১৪ সাল থেকে, যখন উত্তর লন্ডনের অভিজাত একটি এলাকার দুটি শিশু এসে পুলিশকে জানায় যে শয়তানের পূজারী একটি চক্র তাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে এবং সম্ভবত সেই চক্রের নেতৃত্বে আছেন তাদের বাবা, আর তার সঙ্গে রয়েছেন আরো অনেকের মা-বাবা ও শিক্ষক। শিশুদের তৈরি করা এই গল্পের বুনন ছিল বিশদ ও বিভীষিকাময়; তাদের দাবি অনুযায়ী, চক্রটির সদস্যরা শিশুদের হত্যা করে এবং তাদের রক্ত পান করে, তাদের মৃতদেহ স্থানীয় গির্জার গোপন দেরাজে লুকিয়ে রাখে। তবে এই অবিশ্বাস্য ঘটনা নিয়ে তৈরি ধারাবাহিকটির শুরুতে, শিশু দুটি জানায় যে, তারা মিথ্যা বলতে বাধ্য হয়েছিল। ছয় পর্বের এই ধারাবাহিকে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক “স্লো-নিউজ” সংস্থা টরটোয়েজের অনুসন্ধানী প্রতিবেদক অ্যালেক্সি মোস্ট্রাস এই জটিল ও পিলে-চমকানো ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব খতিয়ে দেখেন। বিশ্বজুড়ে গল্পটি কীভাবে চাউর হয় হোক্সড কেবল সেটি নিয়ে অনুসন্ধান করেনি, বরং ষড়যন্ত্রের জাল কীভাবে কাজ করে এবং কর্তৃপক্ষের পদাধিকারীরা কীভাবে তার বৈধতা দেয়, তাও সতর্কতার সঙ্গে খতিয়ে দেখেছে। তথাকথিত হ্যাম্পস্টিড গুজবের শুরু ও বিস্তারের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আজব কর্মকাণ্ডকে দক্ষতার সঙ্গে তুলে আনেন মোস্ট্রাস এবং দেখান যে শুরুতে গুজবের সলতেয় আগুন ধরানো ব্যক্তিদের চেয়েও আরো অনেক, অনেক গভীর গল্পটি। – এমিলি ও’সুলিভান
স্কুলগার্লস, রবার্স ডটার, লিবো/লিবো
- দেশ: রাশিয়া
- ভাষা: রুশ
গল্পটি শুরু হয় যখন রুশ সাংবাদিক নাস্তিয়া ক্রাসিলনিকোভাকে একদল নারী জানান যে তারা কৈশোরে একটি সামার ক্যাম্পে গিয়ে শিক্ষকদের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। পডকাস্ট ও সাক্ষাৎকার-নির্ভর প্রতিবেদন বিশেষজ্ঞ ক্রাসিলনিকোভা, তাদের অভিযোগ তলিয়ে দেখেন এবং জীববিজ্ঞান শেখার “গ্রীষ্মকালীন পরিবেশ বিষয়ক স্কুল”-এর অল্পবয়সী কয়েকজন অংশগ্রহণকারীর কাছ থেকে উদ্বেগজনক সাক্ষ্য সংগ্রহ করেন৷ অভিজ্ঞতা জানতে গিয়ে তিনি যে কয়েকজন সাবেক শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, তাদের মধ্যে একজনের বয়স তখন ছিল মাত্র ১৩ বছর। তাদের অভিযোগ ছিল, শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষকদের সঙ্গে একই তাঁবুতে ঘুমাতে বাধ্য করা হয়েছিল, তাদেরকে অন্তর্বাস না পরতে বাধ্য করা হয়েছিল, আর যাদের শেখানোর কথা, সেই শিক্ষকদের হাতেই এসব ছেলে ও মেয়েরা লাঞ্ছিত হয়েছিল। এই প্রতিবেদক জানতে পারেন, সে সময় শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করলেও মাত্র একজন শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল। এই সাংবাদিককে দেয়া একটি গোপন চিঠিতে নিশ্চিত করা হয় যে ঘটনাটি সম্পর্কে স্কুলের পরিচালক ও শিক্ষকমণ্ডলী অবগত ছিলেন। কয়েকজন কর্মী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের অনাকাঙ্ক্ষিত আবেগীয় ও যৌন সম্পর্ক থাকার কথা স্বীকার করেছেন এবং ক্ষমা চেয়েছেন। পরিচালক স্বীকার করেছেন, কয়েকজন শিক্ষার্থী “অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের” শিকার হয়েছে এবং ঐ সামার স্কুলে হয়রানির ঘটনা ঘটে থাকতে পারে, কিন্তু জোর দিয়ে বলেছেন, এটি একান্তই তার ব্যক্তিগত ধারণা, আর পুলিশ আনুষ্ঠানিক তদন্ত না করা অবধি কিছুই নিশ্চিত নয়; আর সেই তদন্ত এখনো হয়নি। — ওলগা সিমানোভিচ
দ্য আউট ল ওশান পডকাস্ট, দ্য আউট ল ওশান প্রজেক্ট
- দেশ: যুক্তরাষ্ট্র
- ভাষা: ইংরেজি
আমাদের গ্রহের দুই-তৃতীয়াংশই “জলভাগ”, যা সাংবাদিকেরা সাধারণত বিচ্ছিন্নভাবে কাভার করে থাকেন। দ্য আউট ল ওশান প্রজেক্টের পডকাস্টগুলোতে এই জলভাগ নিয়েই অনুসন্ধান করা হয়েছে। এর মধ্যে সমুদ্রে গোলাগুলি থেকে শুরু করে অবৈধ মাছ শিকার এবং মানব পাচার থেকে শুরু করে অপরাধীদের নিয়ে অনুসন্ধান পর্যন্ত অনেক কিছুই রয়েছে। সাত পর্বের পডকাস্ট ধারাবহিকটি নির্মিত হয়েছে বিশ্বজুড়ে প্রায় এক দশকের রিপোর্টিংয়ের ভিত্তিতে এবং এতে দলটির বড় কিছু অনুসন্ধানের ইমারসিভ অডিও সংস্করণও রয়েছে। সমুদ্রে ব্যাপক গোলগুলির একটি ঘটনার ফোনে ধারণ করা রহস্যময় ফুটেজের সূত্র ধরে আট বছরের একটি অনুসন্ধানকে সামনে এনেছে প্রথম পর্বটি। অন্যান্য পর্বগুলো অ্যান্টার্কটিকা ও উত্তর কোরিয়ার উপকূলে অবৈধ মাছ ধরার মত বিষয় উন্মোচন করেছে৷ আউট ল ওশান প্রজেক্ট দলটি তাদের বিপুল আর্কাইভ সংগ্রহ থেকে এমন স্টোরি বেছে নিয়েছে যা দিয়ে আকর্ষণীয় অডিও দাঁড় করানো যায় এবং এটি তাদের বর্ণনামূলক কাঠামো তৈরিতেও কৌশলী হতে সাহায্য করেছে। পডকাস্টটি দেখিয়ে দিয়েছে যে ভূ-ভাগ নিয়ে বলার মতো অনেক স্টোরি রয়েছে ঠিক, কিন্তু মহাসাগর নিয়েও অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির প্রচুর সুযোগ রয়েছে। — আলেক্সা ভ্যান সিকল
আ মুলার দা কাসা অ্যাবান্দোনাদা (পরিত্যক্ত বাড়ির নারী), ফোলা দে সাও পাওলো
- দেশ: ব্রাজিল
- ভাষা: পর্তুগিজ
প্রতিবেদক চিকো ফেলিত্তি, ব্রাজিলে ভাইরাল হওয়া এই পডকাস্টে সাও পাওলোর অভিজাত একটি এলাকার পরিত্যক্ত এক প্রাসাদের বাসিন্দাকে ঘিরে বেড়ে ওঠা রহস্য নিয়ে অনুসন্ধান করেছেন৷ নানাভাবেই এটি একজনের ব্যক্তিগত গল্প: প্রতিবেদক ঐ এলাকায় যান এবং পয়ঃনিষ্কাশনের সুবিধাবিহীন ও ছাদ-ফুটো একটি জরাজীর্ণ বাড়িতে বসবাসকারী সেই অদ্ভূত নারীর ব্যাপারে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন৷ তিনি কে ছিলেন? কেন তিনি মুখে কেবল সাদা মলম মেখে, ভুয়া নামে বাইরে বের হতেন?
ফেলিত্তি দৈনিক ফোলা দে সাও পাওলোকে জানিয়েছেন, “এই গল্পের পরতে পরতে রহস্য লুকিয়ে আছে। আমি ভেবেছিলাম, সমাজে নির্যাতনের শিকার নিছক প্রান্তিক কোনো নারীর ঘটনা, অথচ আমি অপরাধ ও নিষ্ঠুরতার এমন একটি গল্পের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম, যা নিয়ে কখনও অনুসন্ধান করিনি।” এই অনুসন্ধানে তিনি পরিত্যক্ত বাড়িটির প্রতিবেশীদের সহায়তা নিয়েছেন এবং সোর্সের সঙ্গে কথা বলতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন। ফেলিত্তি তাদের সঙ্গে যেভাবে আটপৌরে আলাপচারিতা করেছেন, সেভাবেই পডকাস্টের ফরম্যাটটিকে সাজিয়েছেন: পডকাস্টের একটি অংশে মনে হতে পারে আশেপাশের কারো আড্ডা শুনছি, এমন ফরম্যাটে শ্রোতা একাত্মতা বোধ করে এবং উপভোগ করে। সপ্তাহখানেক পীড়াপীড়ির পর, তিনি সেই বৃদ্ধ ভদ্রমহিলার সাক্ষাৎকারও নিতে পেরেছেন। — আনা বিয়েট্রিজ আসাম
কল বেথেল, দ্য টেলিগ্রাফ (যুক্তরাজ্য)
- দেশ: যুক্তরাজ্য
- ভাষা: ইংরেজি
যুক্তরাজ্যের ডেইলি টেলিগ্রাফের এই অনুসন্ধান শিশুদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া পদ্ধতিগত যৌন নিপীড়নের আরেকটি অভিযোগের পর্দা উন্মোচন করেছে। আতশী কাঁচের নিচে আসা এবারের প্রতিষ্ঠানটি হলো প্রচারবিমুখ ধর্মীয় গোষ্ঠী যিহোভাস্ উইটনেসেস। একটি সূত্র ধরে টেলিগ্রাফের অনুসন্ধানী দল প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে যৌন নিপীড়কের সূক্ষাতিসূক্ষ্ম রেকর্ড ও নথিভুক্ত অভিযোগগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। বাইরে থেকে কীভাবে কাজ করতে হয় এবং একটি সংস্থার গোপনীয়তার ভারী পর্দা সরানো যায় – পাঁচ পর্বের এই ধারাবাহিক ওয়াচডগ রিপোর্টারদের সেই শিক্ষা দেয়। যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশের আদালতের নথির পাশাপাশি আগের ভুক্তভোগী ও গির্জার সদস্যদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে টেলিগ্রাফের সাংবাদিকেরা বেশ কিছু প্রমাণ জোগাড় করেন যা বেথেল নামে পরিচিত ব্রিটেনে যিহোভাস্ উইটনেসের সদর দফতরের সঙ্গে অপরাধের সংযোগ স্থাপন করে। তবে সেখানকার সক্রিয় কয়েকজন সদস্যকে হুইসেলব্লোয়ার হতে রাজি করানোর পরই দলটি এই ভয়াবহ ফলাফল হাতে পায়: গীর্জার সর্বোচ্চ নেতারা এই সিরিয়াল যৌন নিপীড়কদের খবর জানতেন এবং আইন প্রয়োগকারীদের তাদের সম্পর্কে তথ্য দিতে অস্বীকার করেন, যা নিপীড়কদেরকে অন্য ভুক্তভোগীদের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। – রিড রিচার্ডসন
লাস্ট ম্যান স্ট্যান্ডিং, দ্য টাইমস (যুক্তরাজ্য)
- দেশ: যুক্তরাজ্য
- ভাষা: ইংরেজি
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকেই দেশটিতে বিদেশি সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের ধারাবাহিক অপহরণের ঘটনা শিরোনামে আসছে। ব্যাপক সমালোচনা এবং আটকে রেখে কয়েক মাস বা বছর ধরে অমানুষিক নির্যাতনের পর জিম্মিদের কয়েকজনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। আইএসআইএস জঙ্গিরা প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে অন্যান্য বন্দীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিল। এদের মধ্যে ব্রিটিশ সাংবাদিক জন ক্যান্টলি বছরের পর বছর ধরে বন্দী অবস্থায় বেঁচে ছিলেন। পরবর্তীতে আইএসআইএসের বেশ কয়েকটি প্রোপাগান্ডা ভিডিওতে তাঁকে দেখা যায়। বেপরোয়া ও সাহসী হিসেবে পরিচিত এই মানুষটির সঙ্গে কী হয়েছিল, তা অনুসন্ধান করেন সহকর্মী সাংবাদিক অ্যান্টনি লয়েড, যিনি নিজেও সিরিয়ায় অপহৃত হয়ে কয়েক বছর কাটিয়েছেন। ক্যান্টলির সঙ্গে যারা জিম্মি হিসেবে ছিলেন এবং তাঁকে যারা চিনতেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেন লয়েড। তিনি খতিয়ে দেখেন, আইএসআইএসের হাতে দীর্ঘতম সময় জিম্মি হয়ে থাকা সেই সাংবাদিকের অবস্থা কেমন ছিল এবং জানার চেষ্টা করেন কেন আপাতদৃষ্টিতে অন্য কেউ তার খোঁজ করেনি। জিম্মি হওয়ার ১০ বছরেরও বেশি সময় পসে এসে ক্যান্টলিকে এখন মৃত বলে ধরে নেওয়া হয়; কিন্তু তার সঙ্গে যা ঘটেছিল, লয়েডের মতে, তা “বেঁচে থাকার এক অবিশ্বাস্য গল্প।” ফলস্বরূপ যে আট-পর্বের অনুসন্ধানী ধারাবাহিকটি প্রকাশিত হয়, তা সবাইকে নাড়া দেয়ার মতো, সমস্যাসঙ্কুল এবং দুঃসাহসী। লয়েড বলেছেন, “তিনি বেঁচে থাকার জন্যে এমন একটি খেলা খেলেছিলেন, যা খুব কম লোকই পারতেন। আর তিনি এটি প্রায় করেই ফেলেছিলেন।” – লরা ডিক্সন
দ্য প্রিন্স, দ্য ইকোনমিস্ট
- দেশ: চীন/যুক্তরাজ্য
- ভাষা: ইংরেজি
গত বছরের অক্টোবরে চীনের ২০তম কমিউনিস্ট পার্টি কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তৃতীয় মেয়াদে দল প্রধানের পদ নিশ্চিত করেছেন। তিনি এখন তাঁর বাকি জীবন চীন শাসন করতে পারেন। কিন্তু শি কীভাবে ক্ষমতায় এলেন সেই গল্পের অনেকটাই রহস্য রয়ে গেছে। আট-পর্বের এই পডকাস্ট ধারবাহিকে, দ্য ইকোনমিস্টের চীন সংবাদদাতা সু-লিন ওং প্রেসিডেন্ট শি-এর শীর্ষে আরোহণের গল্পের পেছনে ছুটেছেন। চীনের রাজনীতির অন্দরমহলের বেশিরভাগ গল্প গোপন থাকলেও এই পডকাস্টটি শি জিংপিংয়ের শৈশব থেকে শুরু করে তিয়ানানমেন স্কয়ারের গণহত্যা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মতো প্রধান বৈশ্বিক ঘটনাগুলোর সমান্তরালে দলীয় পদবীতে উত্থান-পতনের চিত্র তুলে ধরে। পডকাস্টটি দেখিয়েছে, দক্ষ রাজনৈতিক কৌশল ও দুর্নীতিবিরোধী প্রচারাভিযানকে কাজে লাগিয়ে, শি কীভাবে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের মূলোৎপাটন করেছেন এবং নিজের দলকে এগিয়ে নিয়েছেন। এটি সত্যিই ক্ষমতার এক ম্যাকিয়াভেলিয় গল্প।
এই নেতা সফলভাবে ব্যক্তিগত গল্পগুলোকে সঙ্গে রাষ্ট্রীয় ভাষ্যের সঙ্গে এক সুতোয় গেঁথেছেন। ওং প্রেসিডেন্ট শির নীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত মুসলিম উইঘুর সম্প্রদায়ের সদস্য, স্বাধীন লেখক, মানবাধিকার কর্মী এবং নিয়ন্ত্রণ থেকে পালিয়ে আসা হুইসেলব্লোয়ারদের সাক্ষাৎকার নিয়ে তাদের আকর্ষণীয়, এবং কখনও হৃদয়বিদারক, গল্পগুলোকে তুলে ধরেছেন। এই মহাকাব্যিক পডকাস্ট কেবল শি জিনপিং নয়, চীনের অতীতকেও প্রকাশ্যে এনেছে। — জোয়ি চি
দিসএনচান্তেস (নৈরাশ্য), আরটিবিএফ ও এলভিডিটি
- দেশ: বেলজিয়াম
- ভাষা: ফরাসি
সামাজিক মাধ্যমে অভিযোগ ওঠে, ব্রাসেলসের দুটি পানশালার কর্মীরা এক ভুক্তভোগীকে মাদক খাইয়ে, অমানুষিক যৌন নিপীড়ন করেছে। এরই সূত্র ধরে সাংবাদিক অড্রে ভ্যানব্রাব্যান্ট ও মেরিন গুয়েট অনুসন্ধান করেন, দেশটিতে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের পর ভুক্তভোগী নারীদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা হয়। এক বছরের অনুসন্ধানে তাঁরা দেখতে পান, নারীরা ঘরের বাইরে কতটা অনিরাপদ বোধ করেন এবং চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে পুলিশ স্টেশন, মনোবিজ্ঞানীর চেম্বার থেকে আদালত পর্যন্ত সর্বত্র যৌন নিপীড়নের শিকার নারীরা কী কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। ফন্ডস পোর লে জার্নালিজম-এর সহায়তায় আট-পর্বের এই পডকাস্ট প্রযোজনা করেছে এলভিডিটি ডট স্টুডিও। এটি বেলজিয়ামের রেডিও ও টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়। অনুসন্ধানে, যৌন সহিংসতা থেকে বেঁচে ফেরা তিন নারী কিছু গুরুতর পদ্ধতিগত ত্রুটি তুলে ধরেন। আপাতদৃষ্টিতে ব্যবস্থাটিকে ভুক্তভোগীদের জন্য সহায়ক বলে মনে হলেও বাস্তবে দেখা যায় সেটি অন্তর্নিহিত নানা সমস্যায় জর্জরিত; ভুক্তভোগীরা সবার আগে যাদের মুখোমুখি হন, সেই পুলিশ অফিসার ও চিকিৎসা কর্মীদের অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণও এর অন্তর্ভুক্ত। ব্রাসেলসের পানশালা কেলেঙ্কারি নিয়ে রিপোর্টারেরা এক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সাক্ষ্য নেন – যিনি পরবর্তীতে ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন এবং তাকে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত বাউন্সার দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল এবং কারাভোগ করেছিল। (সেই বাউন্সার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।) এই পডকাস্টের শক্তিমত্তার একটি দিক হলো, অনুসন্ধানটি সহজবোধ্য: সাংবাদিকেরা তাঁদের মেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে যেভাবে কথা বলেন সেভাবেই এখানে কথা বলেছেন, যেখান থেকে বোঝা গেছে অনুসন্ধানে পাওয়া বিষয়গুলো নিয়ে তারা কতটা “উদ্বিগ্ন”।— অ্যালসিয়ন উইমার
দীপক্ষ কাবিন (জোরপূর্বক বিয়ে), কেবিআর
- দেশ: ইন্দোনেশিয়া
- ভাষা: বাহাসা ইন্দোনেশিয়ান
ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে বড় রেডিও নেটওয়ার্ক কেবিআরের ছয় পর্বের এই পডকাস্ট ধারাবাহিকে দেশটিতে বাল্যবিয়ের সমস্যা খতিয়ে দেখা হয়। একটি নতুন আইনে ১৯ বছরের কম বয়সীদের বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তবে তার একটি ধারায় রয়েছে যে ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে সরকার নির্দিষ্ট পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ে করার অনুমতি দিতে পারে। এই ফাঁক কীভাবে কাজে লাগানো হয় তা দেখা যায় ২০২০ সালের পরিসংখ্যানে। দেশটিতে যে ৩৪,০০০ বাল্যবিয়ের আবেদন জমা পড়েছে তা মধ্যে ৩৩ হাজারই সরকারের অনুমোদন পেয়েছে। কেবিআর আইনী বিতর্কে মনোযোগ না দিয়ে বরং, ১৩ বছর বয়সে প্রথম বিয়ের শিকার রাসমিনাহ এবং ১৪ বছর বয়সে বিয়ের পর পারিবারিক সহিংসতার শিকার ইডার মতো ভুক্তভোগীদের ব্যক্তিগত গল্প সামনে এনেছে। এতদিন যে বিষয়টিকে নিছক সংখ্যা দিয়ে তুলে ধরা হতো, সেটিকে বাল্যবিয়ের হৃদয় বিদারক চিত্র হিসেবে তুলে এনেছেন পডকাস্টটির প্রযোজকেরা। জিআইজেএনের অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস কর্মসূচির সহায়তায় নির্মিত ধারাবাহিকটি জনসাধারণের প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং জাতীয় পর্যায়ে বাল্যবিয়ে নিয়ে আলোচনার সুযোগ করে দিয়েছে। স্টোরিটি এ পর্যন্ত পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছেছে। — খলিকুল আলিম
আরও পড়ুন
দূর সমুদ্র নিয়ে বহু বছরের প্রতিবেদন যেভাবে বদলে গেল পডকাস্টে: ইয়ান আরবিনার পরামর্শ
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়ে ২০২২ সালের যে পাঁচটি চলচ্চিত্র অবশ্যই দেখবেন
এ গ্লোবাল, বেস্ট-অব লিস্ট অব রিসেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ পডকাস্টস
লরা ডিক্সন জিআইজেএনের সহযোগী সম্পাদক ও যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। তিনি কলম্বিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ও মেক্সিকো থেকে রিপোর্ট করেছেন, এবং তাঁর কাজ টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, ও আটলান্টিক সহ অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স মিডিয়া ফাউন্ডেশন ও পুলিৎজার সেন্টার ফর ক্রাইসিস রিপোর্টিং ফেলোশিপ পেয়েছেন।
অ্যালেক্সা ভ্যান সিকল জিআইজেএনের সহযোগী সম্পাদক। আগে তিনি বিদেশি চিঠিপত্র বিষয়ক সাময়িকী রোডস অ্যান্ড কিংডমসের জ্যেষ্ঠ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ফিচার সম্পাদনা করতেন ও লিখতেন এবং সাময়িকীর জন্য পুরস্কারজয়ী পডকাস্ট বানাতেন। এছাড়া তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সম্পাদক এবং লন্ডনভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ক অলাভজনক সংস্থার প্রকাশক ছিলেন। তিনি অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় থাকেন।
The post ঘুরে আসুন অনুসন্ধানী পডকাস্টের জগৎ থেকে: ২০২২ সংস্করণ appeared first on Global Investigative Journalism Network.