২০২২ সালের অক্টোবরে সামাজিক মাধ্যম প্লাটফর্ম মেটা (ফেসবুকের মালিকানা প্রতিষ্ঠান) নিয়ে একটি চাঞ্চল্যকর অনুসন্ধানী ধারাবাহিক প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয় ভারতের অলাভজনক বার্তাকক্ষ দ্য অয়্যার। এর কারণ, তারা তাদের প্রতিবেদনে যে সাক্ষ্যপ্রমাণ ব্যবহার করেছে সেগুলো পরে বানোয়াট বলে প্রমাণিত হয়। কিছু স্ক্রিনশট, মেটায় কর্মরত বেনামী সোর্স ও ফাঁস হয়েছে বলে ধরে নেওয়া ই-মেইলের ভিত্তিতে তাদের প্রতিবেদনে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয় এই বলে যে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের একজন কর্মকর্তার অনুরোধে মেটা একটি সমালোচনামূলক ইনস্টাগ্রাম পোস্ট সরিয়ে নিয়েছে। দ্য অয়্যার এই ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছে, অভ্যন্তরীণভাবে ঘটনার তদন্ত করেছে এবং নিজেদের একজন সম্পাদকীয় পরামর্শকের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের দায়ে পুলিশি অভিযোগ দায়ের করেছে।
দ্য অয়্যার একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছে যে, মেটা সম্পর্কিত মিথ্যা দাবি সনাক্তে তাদের নিজস্ব যাচাই ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে। বিরল হলেও নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে দ্য গার্ডিয়ান পর্যন্ত বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনাগুলোর যাচাই-বাছাইয়ে ব্যর্থতার ঘটনার সঙ্গে দ্য অয়্যারের এই ভুলের মিল পাওয়া যায়৷ সবচেয়ে উদ্বেগজনক ক্ষেত্রে অসৎ সোর্স, দুষ্ট রিপোর্টার বা মতাদর্শ-অনুপ্রাণিত “স্টিং” অপারেটিভদের মাধ্যমে সম্পাদকদের কাছে বানোয়াট দাবি বা নথিপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়, যার উদ্দেশ্য হলো নীতি-নৈতিকতা মেনে চলা গণমাধ্যমকে অপদস্থ করা। এই ধরনের প্রতারণা সাধারণত, প্রকাশের আগেই, কঠোর সম্পাদকীয় যাচাই ব্যবস্থায় ধরা পড়ে যায়।
দ্য অয়্যারের ক্ষেত্রে, তাদের নিজস্ব তদন্তে দেখা গেছে যাচাই বাছাইয়ে প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব ও খবর প্রকাশে তাড়াহুড়োই এই ভুলের পেছনে প্রধান কারণ ছিল।
তবে সম্পাদকীয় ত্রুটিজনিত কারণে অনুসন্ধানী ধারবাহিকটি সরিয়ে নেয়ার কয়েকদিন পর তারা ভীতিকর রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মুখে পড়ে। বারো জন পুলিশ কর্মকর্তার একটি দল দ্য অয়্যারের বার্তাকক্ষ ও তাদের তিনজন প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকের বাড়িতে অভিযান চালায় এবং ল্যাপটপ ও ফোন জব্দ করে। এই কঠোর পদক্ষেপের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ভারতের মুক্ত গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও সমমনা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো নিন্দা জানায়।
তাদের নিজেদের পুলিশি অভিযোগে দ্য অয়্যার বলেছে যে একজন সম্পাদকীয় পরামর্শক তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তাদের দাবি অনুযায়ী, সেই পরামর্শক মেটার বেনামী সোর্স থেকে পাওয়া বানোয়াট ইমেইল ও নথি এবং আপাতদৃষ্টিতে সেই প্রমাণগুলোর সমর্থনে দু’জন স্বাধীন বিশেষজ্ঞের ইমেইল সরবরাহ করেছে। সেই দুই বিশেষজ্ঞ সাক্ষ্যপ্রমাণ মূল্যায়নে তাদের ভূমিকার কথা অস্বীকার করে অয়্যার সম্পাদকের কাছে লেখার পর অভ্যন্তরীণ তদন্তটি শুরু হয়েছিল।
পরবর্তীতে গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এই পরামর্শক নিজের ভুল স্বীকার করেছেন, তবে তিনি দ্য অয়্যারের অভিযোগের বিরোধিতা করে মিথ্যাচারের জন্য সোর্সকে দায়ী করেন এবং পুলিশি তদন্তে সহযোগিতা করছেন বলে জানান। দ্য অয়্যারকে “ফাঁসানো হয়েছে” বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের জল্পনা-কল্পনা, পর্যালোচনা, আইনি চ্যালেঞ্জ ও পুলিশি তদন্তের পরও এই প্রতারণার পেছনের উদ্দেশ্য ও এর সঙ্গে জড়িত পক্ষগুলোকে ঘিরে রহস্য রয়ে গেছে।
অভিযোগ খণ্ডন করে মেটার পাল্টা দাবি সত্ত্বেও ফলো-আপ স্টোরিতে দ্য অয়্যার তাদের দাবিতে অটল থাকার কারণে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। যেমন, মেটার বাইরে বানানো একটি মেটা ওয়ার্কপ্লেস অ্যাকাউন্টের কথা উল্লেখ করে মেটা জানিয়েছে, “দ্য অয়্যারের ত্রুটিপূর্ণ প্রতিবেদনের সমর্থনে সাক্ষ্যপ্রমাণ তৈরির জন্য বিশেষভাবে এই অ্যাকাউন্ট বানানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।”
ভারতের গণমাধ্যম পরিবেশ ব্যাপকভাবে রাজনীতি-প্রভাবিত, তাই সেখানে দ্য অয়্যার-কাণ্ড নিয়ে ভালো বিশ্লেষণ প্রকাশ্যে আসা কঠিন। তবে ভারতের গণমাধ্যম ও দ্য অয়্যার নিজেরা কীভাবে এই বিতর্কে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, সম্প্রতি সে বিষয়ে রয়টার্স ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব জার্নালিজম ওয়েবিনারে কথা বলেছেন হিন্দু পাবলিশিং গ্রুপের পরিচালক ও ভারতের দৈনিক দ্য হিন্দু পত্রিকার প্রাক্তন প্রধান সম্পাদক নরসিমহান রাম। সোর্সের ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি এড়াতে অনুসন্ধানী বার্তাকক্ষের জন্য উত্তম-চর্চাগুলোও তুলে ধরেছেন তিনি।
রাম স্বীকার করেছেন, “এটি ভুলে ভরা একটি ভয়াবহ ধারাবাহিক ছিল। অবশ্যই, ভারতীয় বার্তাকক্ষগুলোতে অনেক ভুল হয়, তবে এখানে মেটা ও ক্ষমতাসীন দলের তথ্যপ্রযুক্তি প্রধানকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল, যা নিয়ে অনেকেরই হুমড়ি খেয়ে পড়ার কথা। তবে সাংবাদিকদের ভুল হয় – যেমন, ইরাকের গণবিধ্বংসী অস্ত্র নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের কয়েকটি স্টোরিতে হয়েছিল।”
তিনি আরও বলেছেন: “আমি এমন কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ দেখিনি যা বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ বা যা ব্যবহার করে দ্য অয়্যারকে ফাঁসানো হয়েছে।”
সেই প্যানেলে উপস্থিত রয়টার্স ইনস্টিটিউটের সাংবাদিকতা প্রোগ্রামের পরিচালক মিতালি মুখার্জিও এই মিথ্যা স্টোরির প্রভাবের সার-সংক্ষেপ তুলে ধরেছেন। “এটি বরং এই প্ল্যাটফর্মের জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে এনেছে – তাদের বিশ্বাসযোগ্যতায় আঘাত হেনেছে… যার পরিণতি খুব নেতিবাচক,” তিনি বলেন। “বার্তাকক্ষের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলয়ের প্রতি বিশ্বাস ভেঙ্গে গিয়েছিল।”
“সাংবাদিকেরা সোর্স ব্যবহার করেন, তবে সোর্সরাও সাংবাদিকদের ব্যবহার বা অপব্যবহার করেন – এটি একটি দ্বিমুখী প্রক্রিয়া, তাই আপনাকে খুব সুস্পষ্ট নিয়ম দাঁড় করাতে হবে।” — নরসিমহান রামরামের মতে, দ্য অয়্যারের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল তাদের মূল সাক্ষ্যপ্রমাণের সত্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন ওঠার পরও স্টোরিতে “অটল থাকা।”
তবে তিনি বলেছেন, পুলিশের কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি পরবর্তীতে দ্য অয়্যারের ক্ষমাপ্রার্থনা, প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা এবং সততার মাধ্যমে কষ্টার্জিত বিদ্যমান খ্যাতির কারণে এই প্রকাশনার জন্য পুনরায় জনসমর্থন আদায় করা সহজ হয়েছিল।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, “তাদের ওপর পুলিশের কঠোর পদক্ষেপ, তিনজন প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও স্টোরির সঙ্গে যাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই, এমন ব্যক্তিদের ডিভাইস জব্দ করা —সব মিলিয়ে দ্য অয়্যারের পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে গেলে জনসাধারণ এবং ভারতের সম্পাদক গিল্ড ও প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে তারা অনেক সহানুভূতি পেয়েছিল। কারণ ছিল পুলিশের মাত্রাতিরিক্ত তোড়জোড়।”
রাম আরও বলেছেন, “খুব সীমিত সম্পদ নিয়ে চলা একটি স্বাধীন, অলাভজনক প্রকাশনা দ্য অয়্যার সরকারের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করেছিল। তারা পেগাসাস (স্পাইঅয়্যার) নিয়ে খুব ভাল একটি ধারাবাহিক বানিয়েছে, যা ভারতে জনস্বার্থের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। একজন সাংবাদিক কীভাবে এমন কঠিন ধাক্কা কাটিয়ে উঠবেন? কঠোর পরিশ্রম করুন আর দুর্দান্ত স্টোরি করুন।”
হুইসেলব্লোয়ার ও ঝুঁকিপূর্ণ সোর্সের পরিচয় গোপন রাখা অবশ্যই ওয়াচডগ রিপোর্টারদের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি এবং ওয়াটারগেট ও পানামা পেপারস থেকে গুপ্তালিকস (যার জের ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্নীতিবাজ প্রেসিডেন্ট ক্ষমতাচ্যুত হন) পর্যন্ত বেশ কিছু বিখ্যাত ও প্রভাবশালী অনুসন্ধানের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বেনামী সোর্স।
একইভাবে জাতীয় নিরাপত্তা, অপরাধ ও রাজনীতি বিটের রিপোর্টারেরা নিয়মিতভাবে বেনামী সোর্সের সাহায্যে বড় বড় স্টোরি করেন। অনেকেরই এমন সাংবাদিকতায় ঈর্ষণীয় রেকর্ড রয়েছে যা দিয়ে তারা কেবল তাঁদের সম্পাদকের নয়, বরং সোর্স ও পাঠকদেরও আস্থা অর্জন করেছেন।
গোপন সোর্সের ভূমিকা স্বীকার করে রাম বলেছেন, পরিচয় গোপনেরও নিয়ম থাকা জরুরি, কারণ বানোয়াট সাক্ষ্যপ্রমাণ ব্যবহারের ঝুঁকির জন্য মূলত সুরক্ষার অভাবই দায়ী।
তিনি বলেছেন, “সাংবাদিকেরা সোর্স ব্যবহার করেন, তবে সোর্সরাও সাংবাদিকদের ব্যবহার বা অপব্যবহার করেন – এটি একটি দ্বিমুখী প্রক্রিয়া, তাই আপনাকে খুব সুস্পষ্ট নিয়ম দাঁড় করাতে হবে।”
বার্তাকক্ষের জন্য নির্দেশিকা হিসেবে রাম পরামর্শ দিয়েছেন, বেনামী সোর্স থেকে পাওয়া সাক্ষ্যপ্রমাণ সাধারণত তখনই বিবেচনা করা উচিত, যখন:
- বিষয়টি সুস্পষ্ট যে উন্মুক্ত নথি বা পরিচয় প্রকাশে আগ্রহী সোর্সের মতো বিকল্প কোনো উপায়ে তথ্য পাওয়া যাবে না।
- স্টোরিটি একটি গুরুতর জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে।
- সাক্ষ্যপ্রমাণ নিবিড়ভাবে তত্ত্বাবধান করবেন অন্তত একজন এমন সম্পাদক, যার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে।
- নাম গোপন রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময় ও পদ্ধতি এবং অতিরিক্ত যাচাই-বাছাই, সংশয় ও এর সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে রিপোর্টারদের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকবে।
রাম সতর্ক করে বলেছেন, ফাঁস হওয়া গোপন তথ্য নিয়ে নিবিড় তত্ত্বাবধানও যথেষ্ট নাও হতে পারে। তিনি খোলাসা করে বলেন, “দ্য অয়্যারের বিষয়টি আসলে প্রতিষ্ঠানের একজন শীর্ষ ব্যক্তি তত্ত্বাবধান করেছিলেন, যিনি নিজে কৃতিত্ব নেয়ার জন্য, [স্টাফ] রিপোর্টারকে বিপদে ফেলেননি, আর সেই প্রতিবেদক প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।”
রাম আরও সুপারিশ করেন যে বার্তাকক্ষগুলো যেন সংবেদনশীল অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ফাঁস হওয়া তথ্যের উদ্দেশ্য ও সত্যতা “নিবিড় যাচাই বাছাইয়ের দায়িত্বে” একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নিয়োগ দেয়। (জিআইজেএনের অনুসন্ধানী স্টোরির তথ্য যাচাই নির্দেশিকায় অনেক বিষয়ের পাশাপাশি এই কৌশলটি যুক্ত করা হয়েছে।) “এজন্য কারো সম্পাদক হওয়ার প্রয়োজন নেই,” তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন। “যে কোনো অভিজ্ঞ সাংবাদিককে এ পদে নিয়োগ দিন, যিনি সন্দেহপ্রবণ, এবং তারপর আর এ ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি হবে না।”
অনুসন্ধানে যেসব চিহ্ন দেখে বাড়তি সতর্ক হবেন
অভিযোগ অস্বীকারে অস্বাভাবিকতা। সরকার ও কর্পোরেশনগুলো বরাবরই তাদের বিরুদ্ধে আনা অপকর্মের অভিযোগ অস্বীকার করে থাকে। তবে রাম বলেছেন, গণমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে তাদের অভিযোগ অস্বীকারের একটি সাধারণ ধরণ আছে। তিনি বলেছেন, এই নির্দিষ্ট ধরনের বাইরে অস্বাভাবিক কিছু দেখা গেলে সম্পাদকদের নোট নেওয়া উচিত এবং একটু থামা উচিত। যেমন, একজন মুখপাত্রের অস্বীকৃতি যখন অস্বাভাবিকভাবে দীর্ঘ বা সুনির্দিষ্ট হবে, অথবা উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণ বিকৃত বা বানোয়াট বলে অভিযুক্ত ব্যক্তি যখন অভিযোগ করবেন। এমন পরিস্থিতিতে, সাক্ষ্যপ্রমাণ পুনঃনিরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। তিনি বলেন, “কোনো স্টোরির কেন্দ্রীয় চরিত্র যখন বলে যে প্রমাণটি বানোয়াট, তখন আপনাকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে।”
সাক্ষ্যপ্রমাণ যখন সন্দেহজনক অথবা এত ভালো যে বিশ্বাস করার মতো নয়। মেটার একজন পেশাদার মুখপাত্রের নামে যে ভুয়া ইমেইলটি প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে ব্যকরণগত ভুলকে একটি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন রাম, যা তাঁর মতে “স্পষ্টতই সন্দেহজনক ছিল।” তিনি প্রতিবেদক ও সম্পাদকদের সুরক্ষার জন্য কাণ্ডজ্ঞান ব্যবহারের আহ্বান জানান। “নিজেকে প্রশ্ন করুন: ‘এটি কি তাৎপর্যপূর্ণ?’”
বাইলাইন ক্রেডিটে কন্ট্রিবিউটরের অনীহা। রাম বলেছেন, বেনামী সোর্সের পরিচয় গোপন রাখার কথা বলে কোনো প্রতিবেদক বা কন্ট্রিবিউটর স্টোরিতে নিজের নাম দিতে না চাইলে সম্পাদকদের বিশেষভাবে সতর্ক হতে হবে।
বদ্ধমূল ধারণা — বিশেষত বিতর্কিত বিষয়ে। তিনি বলেছেন, “এটি তখনই হয়, যখন আপনি আপনার বদ্ধমূল ধারণা থেকে কোনো নতুন প্রমাণকে ব্যাখ্যা করেন। প্রতিবেদক ও মতামত লেখকদের যে আলাদা জায়গায় রাখতে হবে এই ধারণাটি সঠিক। তাদেরকে আলাদা রাখুন। অনুসন্ধান করুন; সাক্ষ্য যোগাড় করুন; যাচাই করুন – এই কাজগুলো করলে আপনার পক্ষপাত কমবে।” রাম বলেছেন, দুর্নাম রয়েছে এমন কারো অপকর্ম সম্পর্কে নতুন চাঞ্চল্যকর সাক্ষ্যপ্রমাণ পেলেই তা “বিশ্বাস করার” লোভ থেকে সতর্ক থাকতে হবে সম্পাদকদের।
“তথ্যবিভ্রাটের এই যুগে এমন প্রতারণা থেকে সম্পাদক, রিপোর্টার ও ডেস্কে থাকা সবাই কীভাবে নিজেদের ও প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করবেন?” — দ্য অয়্যারের ন্যায়পাল পামেলা ফিলিপোসঅভ্যন্তরীণ যাচাই ব্যবস্থায় কারিগরি সাক্ষ্যপ্রমাণ যাচাই করা যায় না। মেটা নিয়ে ভুয়া ডিজিটাল সাক্ষ্যপ্রমাণের বিষয়টি উল্লেখ করে রাম বলেছেন, “কিছু প্রযুক্তিগত বিষয় ছিল, যা নিয়ে স্টোরি সংশ্লিষ্ট লোকগুলোর কোনো ধারণা ছিল না। [দ্য অয়্যার] বলেছে, ভবিষ্যতে তারা কোনো প্রযুক্তি বিষয়ক স্বাধীন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ না করে প্রযুক্তিগত ডেটা সংশ্লিষ্ট কোনো অনুসন্ধানী স্টোরি প্রকাশ করবে না – আমার মতে, এটি কিছুটা বাড়াবাড়ি। তবে গুরুতর অনুসন্ধানের জন্য ভালো রক্ষাকবচ।”
কোনো অনুসন্ধান প্রকাশের পরই ভুল বলে প্রমাণিত হলে কী করতে হবে, তা নিয়ে রয়টার্স ওয়েবিনারের পরামর্শ হলো:
- ভুল স্বীকার করুন, মূল কারণগুলো খতিয়ে দেখুন এবং পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনুন। বলির পাঁঠা খুঁজবেন না। রাম বলেছেন, “দ্য অয়্যার নতুন সম্পাদক নিয়োগ দিয়েছে, আর একটি নতুন সম্পাদকীয় পর্ষদ কাঠামো দাঁড় করিয়েছে, যেখানে সম্পাদক তাদের কাছে দায়বদ্ধ। তারা নিজেদের সম্পাদকীয় কর্মকাণ্ডে বড় পরিবর্তন এনেছে।”
- কোনো স্টোরি ধসে পড়লে, ফলোআপ স্টোরির মাধ্যমে সেই একই দাবিতে অটল থাকবেন না — আর অহংকার করবেন না।
- কোনো কন্ট্রিবিউটরের ত্রুটিপূর্ণ সোর্সিং চর্চার কারণে যদি প্রতিবেদন বানোয়াট হয়ে পড়ে, তাহলে সেই কন্ট্রিবিউটরের আগের অনুসন্ধানগুলো ফের যাচাই করুন এবং যে কোনো ভুল প্রকাশ্যে সংশোধন করুন।
- আগের ভুলের জন্য বিব্রত হয়ে কোনো জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংবাদ করা থেকে বিরত হবেন না। রাম বলেছেন, বরং বার্তাকক্ষগুলোর উচিত আরও শক্তিশালী সম্পাদকীয় রক্ষাকবচ ব্যবহার করে পাঠকশ্রোতার জন্য আগের ভুলগুলো স্বচ্ছতার সঙ্গে তুলে ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়া।
- আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করুন – তবে ঘাবড়ে যাবেন না। রাম প্রশ্ন করেন, “কতটা দুঃখিত বললে যথেষ্ট দুঃখ প্রকাশ হবে?” “আমি মনে করি, দ্য অয়্যার যথেষ্ট ক্ষমা চেয়েছে।”
রাম জোর দিয়ে বলেছেন, “কোনো সংবেদনশীল অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে আপনাকে অত্যন্ত সংশয়প্রবণ হতে হবে,” পাছে আপনার পরবর্তী অনুসন্ধানও আরেকটি অসতর্কতার গল্প হয়ে ওঠে। “সোর্স, নিজের যে পরিচয় দিচ্ছেন সেটি কি যথার্থ? তথ্যের নিশ্চয়তা দিতে হবে, আর কঠোরভাবে যাচাই করতে হবে।”
এই মহাকাব্যের সমালোচনায় দ্য অয়্যারের ন্যায়পাল পামেলা ফিলিপোস ধারাবাহিকটিকে “রিপোর্টাজে বড় ধরনের ভুল” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন – তবে বলেছেন, “গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর পুলিশি হামলার” পর স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উৎসাহব্যাঞ্জক সংহতি দেখা গেছে।
ফিলিপোস প্রশ্ন রাখেন, “তথ্যবিভ্রাটের এই যুগে এমন প্রতারণা থেকে সম্পাদক, রিপোর্টার ও ডেস্কে থাকা সবাই কীভাবে নিজেদের ও প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করবেন? একটিই সমাধান… লেগে থাকা। কেবল ভালো সাংবাদিকতাই দ্য অয়্যারকে মেটার ঝঞ্ঝাট থেকে মুক্ত করবে।”
ইউটিউবে রয়টার্স ইনস্টিটিউটের পুরো ওয়েবিনারটি দেখতে পারেন:
আরও পড়ুন
গাইড: অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের তথ্য যাচাই করবেন যেভাবে
হুইসেলব্লোয়িং: যারা গোপনে জানিয়ে দেন অনিয়মের খবর
সিকিং কমেন্ট ফর ইওর ইনভেস্টিগেশন: টিপস ফর দ্য ‘নো সারপ্রাইজ’ লেটার
রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমস পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন। বিদেশ প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের ২৪টির বেশি দেশে সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি ও সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন। এছাড়া তিনি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও আফ্রিকার সংবাদমাধ্যমে অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
The post ভারতে প্রত্যাহার করা একটি অনুসন্ধান থেকে শিক্ষা: বানোয়াট প্রমাণ যেভাবে এড়াবেন appeared first on Global Investigative Journalism Network.