ভ্রমণ ভোগান্তি: সীমান্ত পেরোতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের যত বাধা পাড়ি দিতে হয় 

1 year ago 130

English

journalist travel borders challenges visa

ছবি: শাটারস্টক

এখন দুর্নীতি, আর্থিক অপরাধ ও অবৈধ বাণিজ্য ক্রমেই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই এসব ঘটনা উন্মোচনের জন্য অনুসন্ধানও হতে হয় বিশ্বজোড়া। তবে অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা এই কাজের জন্য এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে নানান সমস্যার সম্মুখীন হন। এই বাধাগুলো যেমন অপ্রত্যাশিত, তেমনি স্বল্প আলোচিত।

অনধিকার ডিজিটাল তল্লাশী, শারীরিক হয়রানি, বা সীমান্তরক্ষীদের চাঁদাবাজির চেষ্টা নিয়ে অনেক প্রতিবেদকের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে, তবে কোনো নির্দিষ্ট ডেটাসেট নেই।

দুর্নীতি বা সীমান্ত রক্ষীদের হুমকি বা কোনো সম্মেলনে যোগ দিতে ভিসা আবেদনের সময় দূতাবাস কর্মকর্তাদের কাছে বারবার বাধার শিকার হওয়া – যাই হোক না কেন ভ্রমণ সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলো একজন ভালো প্রতিবেদকের সেরা পরিকল্পনাও ভেস্তে দিতে পারে। 

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য সীমান্ত পাড়ি দেয়া একটি দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে আফ্রিকায় শুল্ক কর্মকর্তারা প্রায়ই সাংবাদিকদের নির্বিচারে আটক করেন বা তাদের কাছ থেকে ঘুষ চেয়ে থাকেন। এসব বাধার মুখে পড়ে আফ্রিকার অনেক সাংবাদিককে নিজেদের পেশাগত পরিচয় লুকিয়ে বা ক্ষেত্র বিশেষে অবৈধভাবে অন্য দেশে গিয়ে রিপোর্টিং চালিয়ে যেতে হয়। ফলে তাঁদের শারীরিক নিরাপত্তা ও পেশাগত মর্যাদা যথেষ্ট হুমকির মুখে পড়ে।

এই সম্ভাব্য হুমকির পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশের সাংবাদিকেরাও বিদেশ ভ্রমণের সময় সূক্ষ্ম বৈষম্যের শিকার হন। ইরানের সাংবাদিক সুদাবেহ রাখশ্ তাঁর ব্লগে পীড়াদায়ক ও অপমানজনক বাড়তি ধাপগুলো তুলে ধরেন। ইরানে পশ্চিমা দূতাবাস থেকে ভিসা পেতে কিছু নারী সাংবাদিককে প্রায়ই এসব বাধা পেরোতে হয় অথবা ভিসা ছাড়াই ফিরতে হয়৷

“বৈষম্যের প্রশ্নে বেশিরভাগ মানুষের মনে আসে সেই প্রতিষ্ঠিত অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কথা। তবে ইরানি ও মধ্যপ্রাচ্য সহ গ্লোবাল সাউথের নাগরিকেরা সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে দ্বিগুণ বৈষম্যমূলক জীবন পার করছেন,” রাখশ্ লিখেছেন। “কোনো পশ্চিমা নাগরিককে কি কখনো ভিসা পেতে সময়সাপেক্ষ এবং মাঝে মাঝে অপমানজনক তীব্র বাধার মুখে পড়তে হয়েছে?”

বিক্ষিপ্ত ডেটা, উদ্বেগজনক প্রবণতা

সম্ভবত সাংবাদিকদের ভ্রমণ সংশ্লিষ্ট বাধা-বিপত্তির সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক দিকটি হলো, এ বিষয় সম্পর্কে অতটা জানা যায় না। অনধিকার ডিজিটাল তল্লাশী, শারীরিক হয়রানি, বা সীমান্তরক্ষীদের চাঁদাবাজির চেষ্টা নিয়ে অনেক প্রতিবেদকের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে, তবে কোনো নির্দিষ্ট ডেটাসেট নেই।

অনগ্রসর দেশের রিপোর্টারদের বিরুদ্ধে অহেতুক ভিসা বৈষম্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পথে বাধা হিসেবে সামনে আসছে৷

একইভাবে অঞ্চলভেদে ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যানের তথ্য পাওয়া কঠিন (আর গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট ভিসা প্রত্যাখানের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান আরও কম)। ফলে আপাতদৃষ্টিতে ভিসা প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে ব্যাপকভাবে খতিয়ে দেখলে সমস্যার মাত্রা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।

যেমন, ব্রিটেনে আফ্রিকার ভিসা আবেদনকারীদের নিয়ে যুক্তরাজ্যের সংসদীয় কমিটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে সাংবাদিকসহ দক্ষিণের অনগ্রসর দেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রে একটি উদ্বেগজনক চিত্র ফুটে উঠেছে। কমিটির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সামগ্রিকভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আফ্রিকার ভ্রমণ ভিসা আবেদনকারীরা দ্বিগুণেরও বেশি হারে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। একইভাবে ২০২১ সালে অ্যাটলিস ডট কম-এর শেনজেন ভিসা পরিসংখ্যানের একটি বিশ্লেষণ অনুসারে, ইউরোপ ভ্রমণের ক্ষেত্রে আফ্রিকার দেশগুলোর নাগরিকদের বাদ দেওয়ার হার ছিল অস্বাভাবিক; কারণ নাইজেরিয়া, গিনি বিসাউ ও সেনেগালের নাগরিকদের শেনজেন ভিসা আবেদনের অর্ধেকেরও বেশি ২০২১ সালে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। (শেনজেন ভিসায় ২৬টি ইউরোপীয় দেশে প্রবেশাধিকার পাওয়া যায়।) এছাড়াও ভারত থেকে, ৪২% এবং ৩০% ভিসা আবেদন যথাক্রমে সুইডেন ও নরওয়ে প্রত্যাখ্যান করেছিল।

উত্তরের উন্নত দেশে সংবাদ ভিত্তিক অনুষ্ঠান বা সম্মেলনের জন্য ভ্রমণ ভিসা পাওয়া আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের সাংবাদিকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আর অনগ্রসর দেশের রিপোর্টারদের বিরুদ্ধে অহেতুক ভিসা বৈষম্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পথে বাধা হিসেবে সামনে আসছে৷ 

আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম হাবের (আইজেহাব) এর সম্পাদকীয় ব্যবস্থাপক ট্রয় লুন্ড বলেন, “অনেক সহকর্মীই এই সমস্যার শিকার হন। আবেদন প্রক্রিয়ায় একজন ব্যক্তিকে উল্লেখযোগ্য ফি এবং পরিশোধকৃত মূল্য সমেত ফিরতি বিমান টিকিটসহ নথির একটি লম্বা তালিকা জমা দিতে হয়, একটি ভ্রমণসূচী ও শেনজেনভুক্ত দেশের আয়োজক সংস্থার চিঠি যথেষ্ট নয়। এর মানে কারো ভিসা প্রত্যাখ্যাত হলে, অথবা ফ্লাইটের জন্য সময়মতো ইস্যু করা না হলে সেই টাকাও গচ্চা যাবে।”

অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের (ওসিআরপি) দক্ষিণ আফ্রিকা ভিত্তিক সিনিয়র অনুসন্ধানী সাংবাদিক খাদিজা শরিফী বলেন, অনেক সময় নির্দিষ্ট কিছু জাতীয়তার মানুষ এই বৈষম্যমূলক পদক্ষেপের শিকার হন। “দক্ষিণ আফ্রিকার তুলনায় নাইজেরিয়া বা জিম্বাবুয়ের কোনো আবেদনকারী অনেক বেশি হারে প্রত্যাখানের শিকার হবে।”

শরিফী আরও বলেন: “এমনকি বিষয়গুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন হলেও ‘উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ’ পাসপোর্টধারী নাগরিকদের কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই খেয়াল খুশিমত প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে।”

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জিআইজেএন একবার রিও ডি জেনিরোতে তাদের বৈশ্বিক সম্মেলনে যোগদানের জন্য নাইজেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের একজন পদকজয়ী সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। সম্মেলনের আগের দিন এয়ারলাইনটি এই প্রতিবেদককে বিমানে চড়তে না দেয়ায় তিনি লাগোস বিমানবন্দর থেকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফোন করেছিলেন। কারণ তাঁকে প্যারিস হয়ে যেতে হয়েছিল, আর ফরাসি কর্তৃপক্ষ তাঁকে “ট্রানজিট ভিসা” ছাড়া বিমান বদলাতে দিবে না – কেবল বিমান বদলানোর জন্য একটি পৃথক ভিসা৷ (নতুন ভিসার জন্য অপেক্ষা না করে জিআইজেএনকে তাঁর যাত্রাপথ বদলে দুবাই হয়ে রিওতে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হয়েছিল — যেখানে তাঁর পৌঁছাতে ২৪ ঘন্টা দেরি হয়েছিল।)

পাসপোর্ট সুবিধা” নিয়ে সাম্প্রতিক একটি লেখায় কেনিয়ার সাংবাদিক রিচার্ড ওডুর ওদুকু ২০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত অ-ফেরতযোগ্য আবেদন ফি এবং দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষার বর্ণনা তুলে ধরেছেন যা কিনা কেনিয়ার সাংবাদিকদের জন্য এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ওদুকু এই বলে উপসংহার টানেন, “ভিসা প্রক্রিয়া জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে ব্যক্তিকে তুলে ধরে, বৈষম্য ও অপমান করে।”

সীমান্তে সংঘাত

একজন প্রতিবেদকের কাছে উপযুক্ত ভিসা বা ভ্রমণের নথিপত্র থাকলেও বিশেষ কিছু সীমান্ত পাড়ি দেয়া বিপজ্জনক হতে পারে। এছাড়া অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে আপনি এমন দেশ ভ্রমণ করছেন, যেখানে ওয়াচডগ রিপোর্টিং বা সরকারের প্রকাশ্য সমালোচনার কারণে গ্রেপ্তার বা শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, সেক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে।

টোগোর সাংবাদিক বোনাভেঞ্চার এন’কুয়ে মাউভি একটি স্টোরির জন্য ঘানা ও আইভরি কোস্টের মধ্যকার সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে বিপদে পড়েছিলেন। উভয় দেশই ইকোওয়াস চুক্তিতে স্বাক্ষরের মাধ্যমে চলাচলের স্বাধীনতা ও অবাধ যাতায়াতের অনুমোদন দিলেও বছরের পর বছর ধরে অপকর্ম ও দুর্নীতির কারণে এই অঞ্চলের কিছু সীমান্ত ক্রসিং প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে

“পাসপোর্টে অনুমোদন নিতে আমাকে অর্থ গুনতে হয়েছে,” তিনি বলেন। “আমার গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টতার কাগজপত্র দেখেও এজেন্টরা বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করেনি।” মাউভি ইকোওয়াস চুক্তির প্রসঙ্গ টেনেছিলেন। “চলাচলের স্বাধীনতার প্রসঙ্গ তুলতেই পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে ইকোওয়াস সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন, এবং জানান এখানে, এই সীমান্তে, তিনি ও তার সহকর্মীরাই সর্বেসর্বা।”

ঘানার অভিবাসন কর্মকর্তারা ইবাঙ্গা ইসিনকে গ্রেপ্তার করেছে। ছবি: আইসিনের সৌজন্যে

অনুসন্ধানী সাংবাদিক ইবাঙ্গা ইসিন বলেন, এমন পরিস্থিতিতে আফ্রিকায়, বিশেষ করে পশ্চিম আফ্রিকায় আন্তঃসীমান্ত অনুসন্ধান চালানো কঠিন। লাগোস ও আক্রার মধ্যে মানবপাচার ও পতিতাবৃত্তির একটি নেটওয়ার্ক নিয়ে অনুসন্ধানের সময় ইসিন ঘানার অভিবাসন কর্মকর্তাদের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, যারা “জরিমানা” না পেলে তাঁকে আরও আটকে রাখার হুমকি দিয়েছিল।

“আমি তাদের বলেছিলাম যে আমি মহাদেশের একজন সুপরিচিত অনুসন্ধানী সাংবাদিক আর সিএনএন মাল্টিচয়েস আফ্রিকান জার্নালিস্ট অ্যাওয়ার্ড এবং দু’বার ওলে সোয়িংকা অ্যাওয়ার্ড জিতেছি,” তিনি বলেন। “তবে, [অক্রার] কোটোকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমার পরিচিত একজন ঊর্ধ্বতন অভিবাসন কর্মকর্তা হস্তক্ষেপ না করা পর্যন্ত আমাকে ছাড়া হয়নি।”

সাংবাদিক হিসেবে ভ্রমণের পথ সুগমের প্রাথমিক দিক-নির্দেশনা

নরবার্ট জঙ্গো সেল ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম ইন ওয়েস্ট আফ্রিকা (সেনোজো) এর সমন্বয়ক আর্নাউড ওয়েড্রাওগো বলেন, তাঁর সংস্থা ভ্রমণ সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করেন।

সম্প্রতি, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে সংবাদ সংগ্রহে নাইজার সীমান্তে ঢোকার সময় সীমান্ত দুর্নীতির বিষয়টি টের পেয়েছিলেন ওয়েড্রাওগো। শুল্ক কর্মকর্তারা নাইজার থেকে আগতদের কাছ থেকে ১০০০ সিএফএ (পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার মুদ্রা) আদায় করলেও বুরকিনা ফাসোর নাগরিকদের কাছ থেকে মূল্য দ্বিগুণ করে ২,০০০ সিএফএ হাতিয়ে নিচ্ছিল। ওয়েড্রাওগো যে একজন সাংবাদিক, সীমান্তরক্ষীরা বিষয়টি বুঝতে পেরে তাঁকে দল থেকে আলাদা করেছিল। তাঁর ধারণা, তিনি যেন এই অপকর্মের সাক্ষী হতে না পারেন, সেজন্যই তাঁকে আলাদা করা হয়।

ওয়েড্রাওগোর পরামর্শ: সবসময় নিজের সঙ্গে একটি প্রেস কার্ড বা পরিচয়পত্র রাখুন। এটি আপনাকে শুল্ক কর্মকর্তাদের কাছে অন্যদের থেকে আলাদা করার কাজটি সহজ করতে পারে, যেমনটি আগের ঘটনায় হয়েছিল। এটি আপনাকে সুরক্ষাও দিতে পারে। তিনি বলেন, “সব পরিস্থিতিতে যে কাজ করবে, এমনটি নয়, তবে অনেক সময় এটি কাজে আসতে পারে।”

এখানে সাংবাদিকদের প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট ভ্রমণ বা পেশাগত কাজে বিদেশ ভ্রমণে সহায়তায় অন্যান্য সেরা চর্চা তুলে ধরা হলো।

  • একা ভ্রমণ করুন। কাজের জন্য বিদেশ ভ্রমণে স্বামী/স্ত্রী বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে নেয়াটা সাংবাদিকদের প্রচলিত রীতি নয়, তবে পেশাদার সাংবাদিকতার অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার সময় তাদেরকে বাড়িতে রেখে যাওয়াটা ভালো। গ্লোবাল সাউথ থেকে কারো ভ্রমণকে দূতাবাস কর্মকর্তারা সচরাচর (ভুলভাবে) অঘোষিত অভিবাসনের ঝুঁকি বলে মনে করে থাকে। তাই একাকী ভ্রমণে শারীরিক নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি অনেক কম থাকে।
  • ভিসার জন্য আগেভাগে আবেদন করুন। পশ্চিমা কোনো দূতাবাসে ভিসা সাক্ষাৎকারের জন্য পাওয়া পরবর্তী তারিখ হতে পারে কয়েক মাস পর, এবং অতিরিক্ত নথির জন্য অনুরোধ ও আপনার বহির্গমন ফ্লাইটের আগে প্রক্রিয়াকরণে সময় লাগতে পারে। সাংবাদিকদের একটি অভ্যাস হলো শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করা – এখানে তা করবেন না।
  • অনুষ্ঠানের নথিপত্র জোগাড় করুন। কোনো সম্মেলন বা ফেলোশিপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে আয়োজক দেশের সংগঠকের কাছ থেকে আসন্ন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ও ইতিহাসের বিবরণ এবং গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর পেশাদার সাংবাদিকদের ভিসা আবেদনের বিষয়টি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা সরকারি অধিদপ্তর বরাবর লিখতে বলুন। সংগঠকের কাছ থেকে পাসপোর্ট অনুসারে আপনার নামসহ আমন্ত্রণপত্র বা নিবন্ধনের নিশ্চয়তা সম্বলিত চিঠি প্রাপ্তি নিশ্চিত করুন।
  • ভ্রমণসূচী সহজ রাখুন। কেবল পেশাগতভাবে প্রয়োজনীয় বলে প্রমাণ করতে পারবেন, এমন ভ্রমণ তারিখ এবং সিঙ্গেল-এন্ট্রি ভিসার জন্য আবেদন করুন৷ রিপোর্টিং বা সম্মেলনে যোগদানের জন্য উল্লেখিত তারিখ ছাড়াও আরও কয়েক দিন বা সপ্তাহ অবস্থান করার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হতে পারে, সেই সঙ্গে অভিবাসন কর্মকর্তাদের সন্দেহজনক দৃষ্টি পড়তে পারে। পশ্চিমা দূতাবাসগুলো এখন কেবল নির্দিষ্ট তারিখ ও ফিরতি ফ্লাইট ধরতে যত দিন লাগে, ঠিক ততদিনের জন্য ভিসা মঞ্জুর করে থাকে।
  • কোনো সুযোগ দিবেন না। আপনাকে প্রত্যাখ্যান করার কোনো সহজ সুযোগ আয়োজক দেশের দূতাবাসকে দেবেন না। ভ্রমণের প্রয়োজনীয় সময়সীমা পর্যন্ত আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ থাকবে (শেনজেন ভিসার ক্ষেত্রে ছয় মাস); আপনার পাসপোর্টের পৃষ্ঠা খালি আছে; এবং অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি (যথেষ্ট সাশ্রয়ী হতে হবে) মোকাবেলায় আপনার ভ্রমণ বীমা রয়েছে – এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করুন। ভিসা সাক্ষাৎকারের প্রয়োজন হলে দূতাবাসের ওয়েবসাইটে দেয়া নির্দেশনা অনুসারে প্রত্যেকটি পয়েন্ট ধরে ধরে আপনার নথিগুলো সাবধানে জড়ো করুন। কেবল ব্যাংক হিসাবের সারাংশ নয়, বরং কয়েক মাসের ব্যাংক বিবরণীর মুদ্রিত অনুলিপি যুক্ত করতে ভুলবেন না। সেই সঙ্গে দেশে আপনার আর্থিক ও পারিবারিক বন্ধন প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনো নথির কথা ভাবতে পারেন৷
  • স্থানীয় আইন ও বিধিবিধান সম্পর্কে জানুন। কোনো সশস্ত্র সীমান্তরক্ষীর সঙ্গে আইনি যুক্তিতে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও একজন জানাশোনা ভ্রমণকারী সহজে হয়রানির শিকার হন না। দুর্নীতিগ্রস্ত শুল্ক কর্মকর্তারা সহজ ফাঁকফোকর পছন্দ করেন। তাই যিনি বিনয়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করেন এবং নিজের অধিকার সম্পর্কে জানেন, এমন কাউকে তারা হয়ত সহজে ঝামেলায় ফেলবেন না।
  • ডিজিটাল ডেটায় কৃচ্ছতাসাধন।  কর্মকর্তারা যেন আপনার ইলেকট্রনিক ডিভাইস ঘাঁটাঘাঁটি করতে না পারে এবং আপনার কাজ বা সোর্স সম্পর্কে জানতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে যতটা সম্ভব কম ডিজিটাল তথ্য সঙ্গে নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিন। সবচেয়ে ভালো চর্চা হলো আপনার ডেটা নিরাপদে অন্য কোথাও সংরক্ষণ করা, যেন গন্তব্যস্থলে গিয়ে বা বাড়ি ফিরে ডাউনলোড করা যায়। এছাড়াও বায়োমেট্রিক অ্যাক্সেস চালু রেখে সীমান্তরক্ষীদের জন্য আপনার ফোন বা ল্যাপটপ ঘাঁটাঘাঁটির কাজটি সহজ করে দিবেন না, বরং আঙুলের ছাপ ও চেহারা শনাক্তের প্রযুক্তি বন্ধ রাখুন এবং শক্তিশালী আলফা নিউমেরিক পাসওয়ার্ড নিশ্চিত করুন। ডিজিটাল অধিকার বিষয়ক আর্ন্তজাতিক অলাভজনক সংস্থা ইলেক্ট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনের সীমান্ত পাড়ি দেয়ার সময় ডিজিটাল ডিভাইস সুরক্ষিত রাখার একটি নির্দেশিকা রয়েছে।

আরও পড়ুন

স্টেট সেন্সরশিপ: দ্য আদার ট্রাভেল ব্যান

ফ্রিল্যান্সিং: রিস্ক ইনস্যুরেন্স

গ্রান্টস অ্যান্ড ফেলোশিপস ফর জার্নালিস্টস


সিনাতু সাকা পশ্চিম আফ্রিকায় সাংবাদিকতার বিকাশে নিবেদিত অলাভজনক সংস্থা ইকোল্যাবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং নিউজ চ্যানেল ফ্রান্স টুয়েন্টিফোর, আন্তর্জাতিক রেডিও স্টেশন আরএফআই এবং আরবি ভাষার চ্যানেল মন্টে কার্লো দোআলিয়ার সমন্বয়ে গঠিত ফ্রান্স মিডিয়াস মুন্ডের সম্পাদকীয় প্রকল্প ব্যবস্থাপক।

Rowan Philp, senior reporter GIJNরোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের প্রতিবেদক। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমস পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন। বিদেশ প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের ২৪টির বেশি দেশে সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি ও সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন।

The post ভ্রমণ ভোগান্তি: সীমান্ত পেরোতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের যত বাধা পাড়ি দিতে হয়  appeared first on Global Investigative Journalism Network.

Read Entire Article