যা দেখবেন: ২০২৩ সালে অস্কার মনোনীত তথ্যচিত্র

1 year ago 55

English

oscar nominated documentary features

ছবি: জিআইজেএন

গত মাসে লন্ডনে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের সেরাদের সম্মানে ব্রিটিশ একাডেমি অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন আর্টস (বাফটা) আয়োজিত জমকালো লাল-গালিচা সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়েছে। তাতে সেরা তথ্যচিত্রের পুরস্কার পেয়েছে “নাভালনি” যা ২০২০ সালে রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির ওপর বিষ প্রয়োগের ঘটনাকে ঘিরে নির্মিত হয়েছে।

নোভিচক নামের এই মিলিটারি-গ্রেড নার্ভ এজেন্টের বিষক্রিয়ার পেছনে কে ছিল, তা-ই তথ্যচিত্রটির মূল বিষয়বস্তু। অনুসন্ধানটির নেতৃত্বে ছিলেন নাভালনির দুর্নীতিবিরোধী দলের সদস্যবৃন্দ এবং বেলিংক্যাটের প্রধান রুশ অনুসন্ধানী সাংবাদিক ক্রিস্টো গ্রোজেভ।

গ্রোজেভকে ঘিরে যথেষ্ট “নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি” থাকায় তিনি লন্ডনের অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। “নাভালনি”-র প্রযোজক ওডেসা রাই পুরস্কার গ্রহণের সময় জানান, গ্রোজেভের জীবন “রুশ সরকার ও ভ্লাদিমির পুতিনের হুমকির মুখে রয়েছে।”

জীবন নিয়ে হুমকি আসার পর সম্প্রতি গ্রোজেভ অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় নিজ বাড়ি থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। বাফটা অনুষ্ঠান নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি টুইটারে লিখেছেন: “এ ধরনের মুহূর্তগুলো বিশ্বজুড়ে স্বাধীন সাংবাদিকদের ক্রমবর্ধমান বিপদের দিকে ইঙ্গিত দেয়। এই বিপদগুলো যে কেবল খুনি স্বৈরশাসকদের থেকে আসে তা নয়, বরং যে সভ্য বিশ্বে সাংবাদিকেরা কাজ করেন সেখানে তাদের থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা থেকেও উদ্ভুত হয়।”

১২ই মার্চে অনুষ্ঠিত ৯৫তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডে সেরা প্রামাণ্য তথ্যচিত্রের পুরস্কার জিতেছে “নাভালনি”। প্রভাবশালীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও গত বছরের সেরা চলচ্চিত্রগুলোর একটি হিসেবে তথ্যচিত্রটির আরেকটি স্বীকৃতির ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন এর ‍কলাকুশলীরা। এই বিভাগে পাঁচটি তথ্যচিত্র মনোনীত হয় এবং আরো পাঁচটি তথ্যচিত্র মনোনীত হয় সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য তথ্যচিত্র বিভাগে। 

অস্কার মনোনীত সেরা প্রামাণ্য তথ্যচিত্র 

নাভালনি

বিষক্রিয়ার হাত থেকে বেঁচে ফেরার পর রাশিয়ার বিরোধী দলীয় নেতা আলেক্সি নাভালনিকে যখন জানানো হয় যে তাঁর ওপর নার্ভ এজেন্ট নোভিচক প্রয়োগ করা হয়েছিল, তথ্যচিত্রের বর্ণনা অনুসারে, তাঁর স্পষ্ট উত্তর ছিল, “কী যা তা বলছেন।” ভ্লাদিমির পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুতির ব্যাপারে আশাবাদী এই মানুষটির ওপর বিষপ্রয়োগের ঘটনায় রুশ প্রশাসন সবসময় নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে আসছে। তবে তথ্যচিত্রে নাভালনি বলেছেন যে, বিষটি হাতের নাগালে পাওয়া প্রায় অসম্ভব এবং প্রচণ্ড বিপজ্জনক, সেটি প্রয়োগ কারণে সন্দেহভাজনদের  সম্ভাব্য তালিকা ছোট হয়ে আসে। বেপরোয়া হামলা নিয়ে ক্ষুব্ধ নাভালনি বলতে থাকেন, “কাউকে খুন করতে চাইলে তাকে গুলি করুন, হায় যিশু! পুতিন এতটা বোকা হওয়ার কথা নয়।” ড্যানিয়েল রোহারের এই তথ্যচিত্রটি নাভালনির ওপর এই হামলা নিয়ে অনুসন্ধান চালায়। চলচ্চিত্র নির্মাতারা ও বেলিংক্যাটের গ্রোজেভ বলেন, রাশিয়ার সিক্রেট এজেন্টরা এই হামলার পেছনে ছিলেন। উৎসবে যখন চলচ্চিত্রটি চলছিল, তখন নাভালনি একটি রুশ কারাগারে বন্দী ছিলেন: বিষ প্রয়োগের পর তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করা হয় এবং তাঁকে হত্যাচেষ্টার সঙ্গে জড়িত শাসকগোষ্ঠীর চাপানো অভিযোগ, জালিয়াতি ও আদালত অবমাননার দায়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

অল দ্য বিউটি অ্যান্ড ব্লাডশেড

আলোকচিত্রী ন্যান গোল্ডিন গঁৎবাধা ব্যবস্থার সঙ্গে লড়াই করে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, তাঁকে শুনতে হয়েছিল, কেউ “তার নিজের জীবনকে আলোকচিত্রে তুলে ধরে না” এবং তিনি পুরুষ শিল্পী ও গ্যালারি পরিচালকদের বিরূপ প্রতিক্রিয়ারও শিকার হন। কারণ, তাঁর রীতিবিরুদ্ধ কাজের সামনে তাদের প্রচলিত কাজ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল। তবে মার্কিন-বংশোদ্ভূত এই শিল্পী বলেন: “আলোকচিত্র অনেকটা এক ঝলক বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের মত… যা আমাকে কণ্ঠ দিয়েছে।” এই তথ্যচিত্রের কেন্দ্রে আছে গোল্ডিন ও তাঁর সর্বশেষ লড়াই। তার এই প্রচারণায় ব্যবস্থাপত্র-নির্ভর ওষুধের সংকট থেকে লাভবান হওয়া কয়েকটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির সঙ্গে আমেরিকার একটি প্রভাবশালী পরিবারের মধ্যকার যোগসাজশ তুলে ধরা হয়। পরিবারটি জনহিতৈষী কাজের জন্য পরিচিত এবং দেশটির বড় বড় গ্যালারি ও জাদুঘরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। সাক্ষাৎকার, স্লাইড শো, গোল্ডিনের নিজস্ব আলোকচিত্র এবং শিল্পকলার বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে গেরিলা-স্টাইলের প্রতিবাদী চিত্রের মাধ্যমে একাডেমি পুরস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা লরা পোইট্রাস (যিনি ইতিপূর্বে জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ) সম্পর্কে এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁসকাণ্ড নিয়ে তথ্যচিত্র “সিটিজেনফোর” এর জন্য অস্কার জিতেছেন), গল্পটি তুলে ধরেছেন। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকার একজন সমালোচক বলেছেন, “… যারা যন্ত্রণা সহ্য করে এবং সেটিকে সত্যে পরিণত করে, তারা কী অর্জন করতে পারে, ভয়াবহ শক্তিশালী এই চলচ্চিত্রটি তাই মনে করিয়ে দেয়।”

আ হাউস মেইড অব স্প্লিন্টার্স

“দুঃখ দিয়ে গড়া ঘরই আমাদের আশ্রয়। প্রতিটি শিশু আশ্রয়কেন্দ্রের জীর্ণ দেয়ালে একটি স্থায়ী চিহ্ন রেখে যায়, যা দাগ কাটে আমাদের, আর এখানে তাদের বানানো বন্ধুদের মনে” – যেমনটা বলছিলেন “আ হাউস অব স্প্লিন্টার্স” এর অন্যতম এক চরিত্র৷ ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের আগেই তথ্যচিত্রটি চিত্রায়িত হলেও কাজটি হয়েছিল দেশটির পূর্ব সীমান্ত এলাকায় আগের আগ্রাসনের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে। পরিচালক সাইমন লেরেং উইলমন্ট ও প্রযোজক মনিকা হেলস্ট্রোম পূর্ব ইউক্রেনের বিক্ষুব্ধ সীমান্তরেখার কাছে একটি “ভগ্নপ্রায়” বড় অনাথ আশ্রমে তাদের তথ্যচিত্র ধারণ করছেন। ভালো সময়ের অপেক্ষায় এখানেই শিশুরা বসে থাকে, আর হারিয়ে যাওয়া বাবা-মায়ের জন্য পথ চেয়ে থাকে, খেলা করে, কাঁদে, ফিসফিস করে একে অন্যের সঙ্গে কথা বলে এবং বারান্দায় কার্টহুইল চড়ে সময় কাটায়। বেশিরভাগ শিশুই দারিদ্র্য, সহিংসতা ও যুদ্ধের কারণে তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হতে দেখেছে — দেখেছে সেই নারীদের, যারা পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আশ্রয়কেন্দ্র চালিয়ে যাচ্ছেন। ক্যামেরার সামনে একজন নারী বলেন, “জীবন এখানে সবসময় কঠিন। যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে, তবুও এখনো আশা বেঁচে আছে।”

অল দ্যাট ব্রিদস

সানড্যান্স ও কান পুরস্কার জেতার পর অস্কারের অন্যতম দাবিদার ছিল শৌনক সেনের এই “মেডিটেটিভ” তথ্যচিত্রটি। দিল্লি শহরের দূষিত আকাশে আক্রান্ত কালো চিলদের দেখভালের জন্য নিজেদের বেসমেন্টে অস্থায়ী হাসপাতাল গড়ে তোলা দুই ভাইকে নিয়েই এই চলচ্চিত্র। ক্যামেরার সামনে এক ভাই বলেন, “সবাই যে শ্বাস নেয়, সেখানে পার্থক্য করা উচিত নয়।” কয়েক বছর ধরে ধারণ করা এবং ৪০০ ঘন্টার মূল ফুটেজ থেকে বানানো এই চলচ্চিত্রকে সমালোচকরা “চলচ্চিত্র জগতের একটি অসাধারণ, গুরুত্বপূর্ণ অংশ” বলে অভিহিত করেছেন। ক্যারল মিডগ্লি যুক্তরাজ্যের টাইমস পত্রিকায় লিখেছেন, তথ্যচিত্রটি “ধীরগতির, সুস্থির স্টোরিটেলিংয়ে সহজ, কিন্তু বিশাল বাস্তুতন্ত্রে আমাদের সম্পৃক্ততার গভীর দার্শনিকতাকে তুলে এনেছে।” চলচ্চিত্রমুখী দর্শকেরাও এখন পর্যন্ত একমত বলে মনে হচ্ছে, আর টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র সমালোচনা বিষয়ক অনলাইন প্লাটফর্ম রটেন টমেটোস-এ সমালোচকদের কাছ থেকে এটি অবিশ্বাস্য ৯৯% রেটিং পেয়েছে।

ফায়ার অব লাভ

ফরাসি আগ্নেয়গিরিবিদ কাটিয়া ও মরিস ক্রাফ্ট গত দুই দশক ধরে, গোটা বিশ্ব ঘুরে, খুব কাছ থেকে আগ্নেয়গিরি পর্যবেক্ষণ করে আসছেন। তারা প্রবাহিত লাভায় ডিম ভেজে খেয়েছেন এবং তীব্র তাপদহ থেকে বাঁচতে রূপালী রঙের পোশাক পরে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক ঘটনা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তথ্যচিত্রটি তৈরি করেছেন সারা দোসা এবং প্রচারিত হয়েছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে। একটি ক্যাফেতে অপরিচিত দু’জনের সাক্ষাৎ থেকে শুরু করে মৃত্যুর সঙ্গে খেলা করে কাটানো দুই তরুণ বিজ্ঞানীর এক “বিস্ফোরক” সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে এখানে। দু’জনের ধারণকৃত কয়েক ঘন্টার ফুটেজ ও হাজার হাজার ছবিসহ সূক্ষ্মভাবে প্রতিটি দুঃসাহসিক কাজের নথিভুক্ত করা হয়েছে। ক্যামেরার সামনে কাটিয়ার বিচক্ষণ জবাব, “সে যদি মারা যায়, তবে আমি ওর সাথেই থাকব। আমরা এখানে থাকার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকি আর এখনো আমরা এখানেই থাকি।” এই দম্পতি ১৯৯১ সালে জাপানের মাউন্ট উনজেনে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণে মারা যান, তবে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মতে, তাঁদের রেখে যাওয়া কাজ “চিরকালের জন্য প্রাকৃতিক জগৎ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান সমৃদ্ধ করেছে।” রোলিং স্টোন তথ্যচিত্রটিকে “দুর্দান্ত… কথাসাহিত্যের চেয়েও অসাধারণ মাস্টারপিস” বলে অভিহিত করেছেন।

অস্কার মনোনীত সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য তথ্যচিত্র 

দ্য মার্থা মিচেল ইফেক্ট

এই তথ্যচিত্রের একজন সাক্ষাৎকারদাতা ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির তথ্যফাঁসকারী (হুইসেলব্লোয়ার) মার্থা মিচেল সম্পর্কে বলেন, “মার্থা মিচেল এই শহরকে বোমার মতো নাড়িয়ে দিয়েছেন।” তাঁর কারণেই এই কেলেঙ্কারি প্রকাশের অল্প দিনের মাথায় প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে পদত্যাগ করতে হয়। ফিটফাট ও সবসময় হাসিমুখে খোঁচা দেয়ায় ওস্তাদ মিচেল বলেন, “আমি যা বিশ্বাস করি তাই বলি। কী ঘটতে চলেছে, এই মানুষটি তা জানতেন। তিনি প্রেসিডেন্ট হয়ে দায়িত্বে অবহেলা করেছেন।” তবে নিক্সনের প্রথম অ্যাটর্নি জেনারেল জন মিচেলের (যিনি প্রেসিডেন্টের কেলেঙ্কারি-জর্জরিত পুনঃনির্বাচনী প্রচারণা চালাতে সেই পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন) স্ত্রী হিসেবে তাঁর বক্তব্য হোয়াইট হাউসের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অসংখ্য সংবাদ ও আর্কাইভ ছবিকে এক সুতোয় গেঁথে তথ্যচিত্রটি তুলে এনেছে – তাঁর স্বামী যে প্রচারাভিযানের অংশ ছিলেন, সেই একই প্রশাসন কীভাবে তাঁকে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালায়। দ্য লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস পত্রিকায় বলা হয়,“তথ্যচিত্রটি রাজনৈতিক সেক্সিজমের একটি আকর্ষণীয় প্রতিচিত্র, যেখানে উঠে এসেছে নিক্সন-যুগের এক মন্ত্রিসভা সদস্যের স্ত্রী কীভাবে প্রিয় সত্যভাষী থেকে ষড়যন্ত্রের বলির পাঁঠায় পরিণত হয়েছেন।”

হলআউট

নিউ ইয়র্কারের এই ছোট তথ্যচিত্রটি বানিয়েছেন দুই রুশ ভাইবোন- ইভজেনিয়া আরবুগায়েভা ও ম্যাক্সিম আরবুগায়েভ। চলচ্চিত্রটি একটি প্রত্যন্ত আর্কটিক সমুদ্র সৈকতে কর্তব্যরত একজন বিজ্ঞানীর কাজ অনুসরণ করে, এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় ওয়ারেসের ওপর জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রের বরফ গলে যাওয়ার ভয়াবহ প্রভাব বিশদাকারে তুলে ধরে। এই চলচ্চিত্রের ভিজ্যুয়াল প্যালেটটি বর্ণহীন: ধূসর, আবছা এবং ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়া উত্তাল সমুদ্র। সেই বিজ্ঞানীর বাস নির্জন সৈকতের পার্শ্ববর্তী একটি কেবিনে – দৃশ্যধারণের জন্য দুই চলচ্চিত্র নির্মাতা পুরো মৌসুমজুড়ে সেখানে ছিলেন। এই জুটি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আর্কটিক বিষয়ক স্টোরি নিয়ে কাজ করলেও এটিই তাঁদের প্রথম চলচ্চিত্র। এটি নির্মাণ করতে গিয়ে “অ্যামোনিয়া, মলমূত্র ও পচনশীল মাংসের অসহনীয় গন্ধ সইতে হয়েছে,” তাই ইভজেনিয়া এই নির্মাণকে “একটি নাড়িভুড়ি উগড়ে আসা অভিজ্ঞতা” বলে অভিহিত করেছেন। লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস পত্রিকা বলেছে, “এই অবিশ্বাস্য চলচ্চিত্রের জোরালো, অবিস্মরণীয় দৃশ্যের রহস্যময় বিস্ময়… আমাদের সবার জন্য একটি ভয়ঙ্কর আশ্রয়।” তথ্যচিত্রটি কীভাবে বানানো হলো– তা জানতে নিউ ইয়র্কারের এই স্টোরি পড়ুন

স্ট্রেঞ্জার অ্যাট দ্য গেইট

অস্কারে মনোনীতের তালিকায় জায়গা করে নেওয়া নিউ ইয়র্কারের দ্বিতীয় তথ্যচিত্রটি মানসিক আঘাত পরবর্তী চাপজনিত বিপর্যয়ের (পিটিএসডি) শিকার একজন উগ্রপন্থী প্রাক্তন নাবিকের গল্পকে ঘিরে তৈরি। তিনি “মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিলেন” এবং যে জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা করবেন বলে ঠিক করেছিলেন, তাদের কাছেই বন্ধুত্ব ও নিরাপত্তা লাভের আগে তাদেরই ওপর ব্যাপক নৃশংসতা চালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। “আমি কমপক্ষে ২০০ বা এর চেয়েও বেশি মানুষ নিহত, আহত করতে চেয়েছিলাম,” হুমকির সুরে কথাগুলো বলেছেন ম্যাক ম্যাককিনি। কমিউনিটির সদস্যদের বর্ণনায় উঠে আসে, তিনি কীভাবে মসজিদের সামনে পায়চারি করতেন, চিন্তায় মগ্ন থাকতেন, চোখে মুখে ঘৃণার ছাপ থাকত। কিন্তু এরপরই অপ্রত্যাশিত কিছু একটা ঘটে যায় – তাকে মসজিদের ভেতরে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তার হামলার শিকার হতে পারতেন, এমন একজন বলেন, “আমি তাকে রাতের খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। যেন তিনি মন থেকে উপলব্ধি করতে পারেন যে এই কমিউনিটিতে তাকে সাদরে গ্রহণ করা হবে।” এফবিআইয়ের হাতে আটকের সময় থেকে তিনি বোমা তৈরির সরঞ্জাম থেকে দূরে সরে এসেছেন আর তার হামলার লক্ষ্যবস্তু জনগোষ্ঠীই এখন তাকে সেই কলুষিত অতীত পেছনে ফেলতে সহায়তা করছে। পরিচালক জোশুয়া সেফতেকে এই নাবিক বলেন, “এই জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে আমি যা পেয়েছি, লক্ষ বছরেও তা আমি শোধ করতে পারব না।” লস অ্যাঞ্জেলস  টাইমস বলেছে, মালালা ইউসুফজাই প্রযোজিত এই তথ্যচিত্রে দেখানো হয় যে “প্রতিহিংসা কীভাবে আমূল উদারতায় রূপ নেয়।”

দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স

৪০মিনিটের এই স্বল্পদৈর্ঘ্য তথ্যচিত্রটি রঘু নামের দলচ্যুত এক অনাথ হস্তিশাবকের যত্নে দক্ষিণ ভারতের দম্পতি বোম্যান ও বেলির জীবন কাটিয়ে দেওয়ার গল্প তুলে ধরে। কার্তিকি গনসালভেস পরিচালিত এই চলচ্চিত্রের দৃশ্য ধারণ করা হয় একটি বাঘ সংরক্ষণ এলাকায়, যেখানে তথ্যচিত্রের প্রধান চরিত্রগুলোর পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাস করে আসছে। তথ্যচিত্রটি অদ্ভূত এই পরিবারের এক অবিশ্বাস্য পটভূমি সামনে এনেছে। ক্যামেরার সামনে এই জুটির একজন বলেন, “বনকে ঘিরেই আমাদের জীবনধারণ,  তবে আমরা এটিকে রক্ষাও করি৷” এই দম্পতি নিজেদের তত্ত্বাবধানে থাকা হাতিটির সঙ্গে কথা বলে, অন্যদিকে শিশুরা নদীতে এটির সঙ্গে খেলা করে, এমনকি হাতিটি ফুটবলও খেলে: হিন্দু পত্রিকার একজন পর্যালোচকের মতে, সব কিছু মিলে এখানে একটি “চোখজুড়োনো ভিজ্যুয়াল সাফারি” তৈরি হয়।

হাউ ডু ইউ মেজার এ ইয়ার?

মা-বাবা প্রায়ই বলেন, সন্তানদের সঙ্গে তাঁদের কাটানো সময়গুলো দ্রুত ফুরিয়ে যায়। কিন্তু আপনি যদি প্রতি বছর একই দিনে তাদের দৃশ্য ধারণ করে রাখেন তবে সেই গল্পটি কেমন হবে? কীভাবে তারা বদলায়? থেরাপিস্ট থেকে চলচ্চিত্র পরিচালক বনে যাওয়া মার্কিন নির্মাতা জে রোজেনব্ল্যাট “হাউ ডু ইউ মেজার এ ইয়ার?” নামক তথচিত্রে এই প্রশ্নগুলো তলিয়ে দেখেন। তিনি গত বছর ভিন্ন একটি চলচ্চিত্রের জন্য একই বিভাগে মনোনীত হয়েছিলেন। এই তথ্যচিত্রে তিনি তাঁর মেয়ে এলার দুই থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত ১৭ বছরের জন্মদিনের সাক্ষাৎকার তুলে ধরেছেন। এক সাক্ষাৎকারে রোজেনব্ল্যাট বলেছেন, “এই চলচ্চিত্রে আমরা এই মেয়েটিকে শারীরিক, আবেগীয় ও মানসিক দিক থেকে একজন নারীতে পরিণত হতে দেখি। এটি অনেকটা সময়-প্রবাহকে দেখার মতো।” এলাকে করা তার বাবার প্রশ্নগুলোর মধ্যে রয়েছে: তুমি কী নিয়ে স্বপ্ন দেখ? তুমি কিসে ভয় পাও? আমাদের সম্পর্ক নিয়ে তুমি কী ভাবো? তোমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কী? শেষের প্রশ্নে সে উত্তর দেয় “আমার পরিবার,” তারপর একটু থেমে জানতে চায় “উত্তর হিসেবে আমার কুকুর কি বিবেচিত হবে?” রেডিও টাইমসের ভাষ্যমতে, তথ্যচিত্রটি “বেড়ে ওঠা এবং বাবা ও মেয়ের মধ্যকার ভালবাসার একটি ছোট গল্প।”

আরও পড়ুন

ঘুরে আসুন অনুসন্ধানী পডকাস্টের জগৎ থেকে: ২০২২ সংস্করণ

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়ে ২০২২ সালের যে পাঁচটি চলচ্চিত্র অবশ্যই দেখবেন

নাভালনিকে বিষপ্রয়োগে জড়িত গুপ্তচরদের যেভাবে উন্মোচন করেছেন সাংবাদিকরা


Laura Dixon GIJN Associate Editorলরা ডিক্সন জিআইজেএনের সহযোগী সম্পাদক ও যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। তিনি কলম্বিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ও মেক্সিকো থেকে রিপোর্ট করেছেন, এবং তাঁর কাজ টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, ও আটলান্টিকে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স মিডিয়া ফাউন্ডেশন ও পুলিৎজার সেন্টার থেকে ফেলোশিপ পেয়েছেন।

The post যা দেখবেন: ২০২৩ সালে অস্কার মনোনীত তথ্যচিত্র appeared first on Global Investigative Journalism Network.

Read Entire Article